নিজের বক্তব্যেই ফেঁসে গেছেন মিন্নি
বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই রায়ে মিন্নির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিই তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিতে ভূমিকা রেখেছে। মিন্নির জবানবন্দিকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিয়ে সমর্থন দেওয়া হয়েছে।
এই রায় অনুযায়ী, মিন্নির সঙ্গে রিফাত শরীফের দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি এবং মিন্নিকে মারধরের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ধরে। এমন করে মিন্নিই মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে প্রমাণিত হন। এই রায়ে মিন্নির একই সঙ্গে দুই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টিরও উল্লেখ আছে।
এই রায় অনুযায়ী, আসামি মিন্নি তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন যে, আইডিয়াল কলেজে পড়ার সময় ভিকটিম রিফাত শরীফের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। রিফাত শরীফের মাধ্যমে তার বন্ধু আসামি নয়নবন্ডের সঙ্গেও পরিচয় এবং পরবর্তী সময়ে নয়নবন্ডের সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এই রায় অনুযায়ী, রিফাত শরীফের মাধ্যমেই তার বন্ধু নয়নবন্ডের সঙ্গে পরিচয় হয় মিন্নির। এরপর তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর আগে রিফাতের সঙ্গে আইডিয়াল কলেজে মিন্নির পরিচয় ঘটে।
রায়ের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায়, এই মামলার ভিকটিম রিফাত শরীফকে খুনের ঘটনায় আসামিরা সমানভাবে দায়ী। আসামি মিন্নি এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তার কারণেই পুত্রহারা হয়েছেন রিফাতের বাবা-মা। এই রায়ে বলা হয় মিন্নির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তার পদাঙ্ক অনুসরণে তার বয়সী মেয়েদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই এই মামলায় তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
মিন্নি ছাড়াও আলোচিত এই মামলায় ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ।
গত ১ সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাগে বিভক্ত অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নৃশংসভাবে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার বহুল আলোচিত এ মামলায় পুলিশ যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জনের বিচার চলে জজ আদালতে। এর মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান তারা। বাকি ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার চলছে বরগুনার শিশু আদালতে আলাদাভাবে।